স্নাইপার টাওয়ার

স্টারি মোস্ট
স্টারি মোস্ট

মোস্টার। হারজ়েগোভিনার সবথেকে বড় শহর। ১৯৯৩ বসনিয়া যুদ্ধের ক্ষত আজও ছড়িয়ে চারিদিকে। তবু তারই মধ্যে ৪৫০ বছর আগে ওটোমানদের তৈরি পাথরের ব্রিজ স্টারি মোস্ট (স্টারি = পুরনো, মোস্ট = ব্রিজ) আর নদীর দুপাশের পুরনো বাজার ঘিরে জমজমাট পর্যটনকেন্দ্র। সাজানো রেস্তোরাঁর চেভাপি, পুরনো হামাম আর বিভিন্ন দোকানের স্যুভেনির পেরিয়ে কিছুটা এগোলেই অবশ্য বিদেশি মুখ কমে আসে। বাচ্চার দল কাপড় ধরে টান মারে পয়সার জন্য। মাঝবয়সেই বুড়িয়ে যাওয়া একটা লোক খেজুরে আলাপ জমানোর চেষ্টা করে। গাইড। আশেপাশের কিছু ছোট শহর আর গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবে। কিন্তু আমাদের হাতে সময় কম। তাকে নিরস্ত করে এগিয়ে যাই।
মুশালা ব্রিজ থেকে একটু এগোলেই বুলেভার। শহরটাকে দুভাগ করে দেওয়া চওড়া রাস্তাটাই ছিল এক সময়ের ফ্রন্ট লাইন। পশ্চিমের ক্রোট আর পূর্বের বসনিয়াকদের মধ্যের বিভাজনরেখা। যুদ্ধ শেষ হয়েছে বছর পনেরো হল। এমনিতে দেখলে মনে হয় সবই স্বাভাবিক। কিন্তু দুই জাতের মধ্যে দূরত্ব রয়ে গেছে আজও। স্কুল, নাইট ক্লাব, বাস ডিপো, মায় দমকল, ইলেকট্রিক সাপ্লাই থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত আলাদা দুদলের।

পুরনো বাজার
পুরনো বাজার

বুলেভার পেরিয়ে এসে দাঁড়াই লিউবলিয়ান্সকা ব্যাঙ্কের পুরনো বাড়িটার সামনে। মোস্টারে উঁচু বাড়ি বিশেষ নেই। তাই মাত্র আটতলা হলেও বেশ তালগাছ মার্কা মনে হয় এটাকে। উপরের তলা থেকে দেখা যায় অনেকটা। নদী পেরিয়ে শহরের অন্য দিকটাও। আর সেই কারণেই নাকি যুদ্ধের সময় এখানে আস্তানা গেড়েছিল ক্রোট দলের স্নাইপার। কড়া নজর থাকত বসনিয়াক অঞ্চলে, আর কাউকে চোখে পড়লেই ছুটে আসত গুলি।

স্নাইপার টাওয়ার
স্নাইপার টাওয়ার

যুদ্ধের আগে স্থানীয়দের মুখে মুখে চালু নাম ছিল গ্লাস ব্যাঙ্ক। বেশ সুন্দর নাকি দেখতে ছিল কাঁচে মোড়া বাড়িটা। সেই সব অবশ্য এখন দেখে বোঝার উপায় নেই। খালি কংক্রিটের একটা খাঁচা দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার উপর। সারা গা গুলি আর শেলের গর্তে ভর্তি। লোকে এখন ডাকে স্নাইপার টাওয়ার বলে।

স্নাইপার টাওয়ার
স্নাইপার টাওয়ার

পরিত্যক্ত বাড়িটার বর্তমান মালিকানা বলা যায় একদল গ্রাফিতি আর্টিস্টের হাতে। দূর থেকেই চোখে পড়ে দেওয়ালের বড় বড় আঁকাগুলো। এমনিতে এখানে ঢোকা নিষেধ, তবে পাঁচিলের এক জায়গায় পাথর ফেলে অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। ন্যাড়া সিঁড়ির বিপদ আর জমে ওঠা ভাঙা কাঁচ এবং আবর্জনা পেরোতে পারলে দেখা মিলবে অজস্র ছোট বড় গ্রাফিতির। একসময় যেখান থেকে ছুটে যেত বন্দুকের গুলি আজ সেখানের দেওয়ালে যুদ্ধবিরোধী ছবি, একতার স্লোগান। তবে মোস্টারের রোজকার জীবনযাত্রায় এর প্রভাব কবে পড়বে সেটাই বড় প্রশ্ন।

স্নাইপার টাওয়ারের ভিতরে
স্নাইপার টাওয়ারের ভিতরে