স্লোভেনিয়ার মেসানো মেসো
২০১৯ এর ডিসেম্বর। সুইৎজারল্যান্ড থেকে রাতের ট্রেন ধরে সকাল সকাল এসে নেমেছি স্লোভেনিয়ার রাজধানী লিউব্লিয়ানায়। ভোরের কুয়াশায় দূর্গ যাওয়ার পথে গির্জার সামনে দেখি সার দিয়ে খাবার দোকান। পাকা দোকান নয়, মেলার মতন স্টল। স্বাভাবিকভাবেই দোকান খোলেনি তখনো, তবে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। কোথাও বেড়াতে গেলে স্থানীয় খাবার চেখে না দেখলে কি আর চলে? তাই ভাবলাম দোকান খোলার আগে ফাঁকায় ফাঁকায় খোঁজ নিয়ে নিই কোথায় কি পাওয়া যাচ্ছে।
দুধারে দোকানের সারি আর বসে খাওয়ার চেয়ার টেবিল ছড়ানো। মাঝখান দিয়ে হাঁটাচলার রাস্তা। একটা দোকানে ‘ওল্ড স্কুল স্লোভেনিয়ান ফুড’ লেখা দেখে এগিয়ে যাই আমরা। প্রথম যে নামটায় চোখ পড়ে, দেখে চমকে উঠি। মেসানো মেসো। অবিকল মনে হল পুজোর সময় দেওয়া কোন দোকানে কেউ ভুল বানানে লিখেছে মেশানো মাংস। যাই হোক, দোকানির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম খাবারটা কি। উত্তর শুনে আবার একচোট চমক। বলে মেসানো মেসো মানে নাকি মিক্সড মিট! বোঝো কান্ড। গুগুল ট্রান্সলেট খুলে দেখলাম স্লোভেনিয়ার ভাষায় মেশানো হচ্ছে mešano আর মাংস হচ্ছে meso।
এতটাই মজা লেগেছিল এই মিল দেখে যে ছুটি থেকে ফিরে এটা নিয়ে একটু খোঁজাখুঁজি শুরু করি। ভাষাতত্ত্ব নিয়ে আমার জ্ঞান একদমই নেই, তবু যা বুঝলাম, আমাদের মাংস আর ওদের মেসোর উৎপত্তি একই। প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয় মেমস থেকে ইন্দো-ইরানিয়ান/ইন্দো-আরিয়ান মামস এবং সংস্কৃত মাঁস হয়ে আমাদের মাংস। ওদিকে ওদেরও প্রোটো-স্লাভিক হয়ে স্লোভেন মেসো। কিন্তু মেশানো? সেটা তো একদমই এক শুনতে। বেশি তথ্যের কচকচিতে না গিয়ে বলা যায় এর একেবারে বিশ্বব্যাপি প্রভাব। আমাদের মিশ বা সংস্কৃত মিশ্র, স্লোভেন মেশানো, লিথুয়ানিয়ানদের মিসরাস, লাতিন মিসকিও, ফার্সি অমিক্সট্যান, জার্মান মিশেন বা ইংরেজি মিক্স (সবকটার উচ্চারণ ঠিক লিখলাম কিনা নিশ্চিত নই) – সবারই টিকি বাঁধা আছে এক জায়গাতেই।
সারাদিন ঘোরবার পর সেদিন ওই দোকানেই খেতে গিয়েছিলাম। নাঃ, মেসানো মেসো খাইনি। ইয়োটা স্যুপ, সসেজ, পর্ক রিবস – এইসব নিয়েছিলাম। সেই গল্প আরেকদিন।