অবশেষে গুরু দেখা দিলেন

 

       “হিঁইঁইঁইঁইঁইঁইঁইঁ”, তীব্র সাইরেনের মতন একটা চিৎকার করে লাফিয়ে উঠলেন লালমোহনবাবু।
 
আগেরবার লন্ডনে এসে কিছুই প্রায় দেখা হয়নি বলে বেশ দুঃখ ছিলো ভদ্রলোকের। এবার তাই বেঙ্গলী ক্লাব থেকে আমাদের নিমন্ত্রণ করায় আর সুযোগ ছাড়েননি উনি। অনুষ্ঠানের পনেরো দিন আগেই আমরা পৌঁছে গিয়েছি রানীর শহরে। কোথায় কি দেখতে যাওয়া হবে সেই প্ল্যানটা বানাতে শুরু করেছিলেন লালমোহনবাবুই। তবে এডমান্ড হিলারির বাড়ি দেখতে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করায় ফেলুদা যখন বললো ওনার বাড়ি নিউজিল্যান্ডে, তার পর থেকেই উৎসাহ  হারিয়ে বাকিটা ফেলুদার ওপরেই পুরোপুরি ছেড়ে দেন ভদ্রলোক।
 
আজকে সকালে টাওয়ার অফ লন্ডন দেখে আমরা টেমসের ধারে এসে বসেছি। লালমোহনবাবু আমাদের জন্য ক্যারামেলাইজড বাদাম কিনে এনে বসে খুচরো গুনছিলেন। এমন সময়েই সেই তীব্র সাইরেনের মতন চিৎকার। ফিরে দেখি ভদ্রলোক একটা কয়েন হাতে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখদুটো প্রায় ঠিকরে বেরিয়ে আসছে।
 
       “কি কান্ড ভাই তপেস! ফেলুবাবু!” পয়সাটা ফেলুদার দিকে এগিয়ে দিলেন লালমোহনবাবু।
 
একটা পঞ্চাশ পেন্স। নতুন, বেশ চকচকে। রানীর মাথা আঁকা। কিন্তু ফেলুদা কয়েনটা ওল্টাতেই চমকে উঠলাম। প্রচন্ড চেনা একটা মুখ। সেই পৃথিবীবিখ্যাত টুপি আর পাইপ। ফেলুদার গুরু, শার্লক হোমস। 
 
 
       “কি থ্রিলিং ব্যাপার বলুন তো মশাই! একটা গোটা পয়সা ওনার নামে। আর আমাদের দেখুন। না আপনি, না ব্যোমকেশবাবু, না শঙ্কুস্যার।”
 
       “কার সঙ্গে কার তুলনা করছেন লালমোহনবাবু!”, ফেলুদা পয়সাটা ফেরত দিতে দিতে বললো। “এই কয়েনটার কথা এখানে আসবার আগেই পড়েছিলাম। স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের ১৬০ তম জন্মবার্ষিকি এই বছর। সেই উপলক্ষেই বের করা হয়েছে এটা।”
 
       “ফেলুদা, সত্যজিতবাবুরও কিন্তু ১০০ হতে চলল। এই তো ২০২১ এই।”
 
ফেলুদা শুনে কিরকম উদাস হয়ে টেমসের দিকে তাকিয়ে বাদাম চিবোতে লাগল।
 
#বিলেতেফেলুদা #বাংলায়Blogবক