হোটেলের মধ্যে বাড়ি
বাড়ির মধ্যে হোটেল সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে আছে। বিশেষ করে সস্তা হোটেল বা হোস্টেলের ক্ষেত্রে এটাই বরং নিয়ম। কিন্তু হোটেলের মাঝখানে বাড়ি? তাও আবার কেতাদুরস্ত, ঝাঁ চকচকে হোটেল! হ্যাঁ, এরকমও হয় বটে।
১৮৮০র দশক। নেদারল্যান্ডসের রাজধানী অমস্টেরডমে তৈরী হচ্ছে নতুন রেল স্টেশন অমস্টেরডম সেন্ট্রাল। এই সময়ে জর্মন স্থপতি হেঙ্কেনহাফের মাথায় আসে এক বিলাসবহুল হোটেল বানানোর পরিকল্পনা। জায়গাও পছন্দ হতে দেরী হয়না। নতুন রেল স্টেশনের একদম উল্টোদিকেই এই হোটেল বানাবেন বলে ঠিক করেন হেঙ্কেনহাফ। দোমরাখ আর প্রিন্স হেন্দ্রিকাদে নামে দুটো বড় রাস্তার সংযোগস্থলের বাড়িগুলি কিনে নিতে থাকেন উনি। আর ঝামেলার শুরু হয় এখান থেকেই।
অমস্টেরডম সেন্ট্রাল |
অবশেষে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে হেঙ্কেনহাফের। তৈরী হয় নতুন প্ল্যান।ওই দুটো বাড়ী রেখেই, তাদের ঘিরে শুরু হয় হোটেল বানানো। ঠিক কত টাকা তাঁদের মাথায় ছিল বা হোটেল মালিকের পক্ষে সত্যিই তা দেওয়া সম্ভব ছিল কিনা এখন আর হয়ত বলা সম্ভব নয়। তবে ইতিহাস বলে নেদারল্যান্ডসে এই ভিক্টোরিয়া হোটেলেই প্রথম সব ঘর সমেত পুরো বাড়িতেই ইলেক্ট্রিক আলো লাগানো হয়েছিলো। এখানে থেকে গেছেন নর্তকী-গুপ্তচর মাতা হারি থেকে ইংলিশ হেভি মেটাল ব্যান্ড আইরন মেডেন। আর অমস্টেরডমে ঘুরতে আসা লক্ষ লক্ষ লোকের সামনে আজও দাঁড়িয়ে আছে ৪৫ এবং ৪৭ নম্বর প্রিন্স হেন্দ্রিকাদের দুটি বাড়ি, বর্তমানে স্যুভেনির শপ হয়ে। মনে হয় হোটেলের দেওয়ালটা ঠেলে ঢুকিয়ে যেন বসিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের।
ভিক্টোরিয়া হোটেল |
১৯৯৯ সালে এই ঘটনা নিয়ে একটি উপন্যাস লেখেন থমাস রসেনবুম। ২০১৫ সালে তার উপর বানানো হয় সিনেমা। ইংরেজিতে “আ নোবল ইন্টেনশন” নামের সিনেমাটি নেটফ্লিক্সে পাওয়া যাবে।
৪৫ এবং ৪৭ নম্বর প্রিন্স হেন্দ্রিকাদের দুই বাড়ি |
তবে এই ঘটনার সব থেকে ভালো দিকটা হল এই বাড়িদুটোর টিকে যাওয়া। আজ যেখানে প্রোমোটারদের অত্যাচারে ইচ্ছে না থাকলেও সব ছেড়ে দিতে হয়, সেখানে এত বড় একটা নির্মান সংস্থার বিরুদ্ধে লড়েও যে, জেতা না হোক, খাঁড়া থাকা যায়, তার প্রমান এই দুটো বাড়ি।