সিনিয়র স্প্যাগেটি এবং সত্যজিৎ

টিনটিন জার্নালের অন্তত একটা সংখ্যা জোগাড় করবার ইচ্ছে আমার ছিল বহুদিনের। টিনটিনের প্রথম ছাপা সংস্করণ দেখার লোভ তো ছিলই, তার সঙ্গে সেই সময় আর কার কার কমিকস সেখানে ছাপা হতো, বিষয় কী থাকতো, এসব নিয়েও কৌতুহল কম ছিল না। মাস কয়েক আগে ঠিকঠাক দামে পেয়ে যাই ১৯৫৮/৫৯ সালের তিনটে জার্নাল। টিনটিন ইন টিবেট ছাপা হচ্ছে তখন। একদম শেষ পাতায়, একপাতা করে। আর ভিতরে ভর্তি অ্যাসটেরিক্স খ্যাত গসিনি-ইউদেরজোর ওমপা-পা থেকে এডগার জ্যাকবসের ব্লেক মর্টিমর। এসবের মধ্যেই পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে চোখ পড়ে গেল একটা কমিক স্ট্রিপে। সিনিয়র স্প্যাগেটি। আঁকা দিনো আতানাশিও। লেখা গসিনি। 

 

সিনিওর স্প্যাগেটি থাকেন ফ্রান্সে, ইতালিয়ান উচ্চারণে ভাঙা ভাঙা ফরাসী বলেন। সেইভাবে কাজের কোন ঠিক নেই। বেশিরভাগ সময় বেকারই থাকেন। কিন্তু পোশাক-আশাকের দিক থেকে একদম ফিটফাট। সব সময় পরনে কালো স্যুট। সঙ্গে বো টাই। স্প্যাগেটির মজার কমিকসগুলো প্রথমে ছিল এক পাতার। পরে ধারাবাহিকভাবে বেরোতে শুরু করে লম্বা লম্বা গল্প। এরকমই একটা ধারাবাহিক এই জার্নালগুলোতে চলছিল। আর তারই একটা প্যানেল দেখে চমকে উঠি। গল্পে মিল না থাকলেও চরিত্রে আশ্চর্য মিল সত্যজিৎ রায়ের করা একমাত্র কমিকস সিরিজের লোকটির সাথে। 

দুজনেই পোষাকের দিক থেকে সৌখিন। পেশার সাথে অনেক সময়েই যা মেলানো যায় না। চেহারা, হাবভাব, এমনকি দুজনের গোঁফজোড়াও একরকম। সত্যজিৎ যে ইউরোপীয় কমিকসের ভক্ত ছিলেন, সেটা পড়েছি। বাংলায় টিনটিন জনপ্রিয় করার পিছনেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। টিনটিন জার্নালের এই সংখ্যাগুলো না সিনিয়র স্প্যাগেটির বই, কোনটা তাঁর হাতে পড়েছিল জানা নেই। তবে পাশাপাশি রাখলে, নিজের কমিকস আঁকার সময় এই চরিত্রটি যে তাঁর অবচেতনে ছিল, এই ধারণাটিকে কিন্তু একদমই অযৌক্তিক মনে হয় না।