রাজগীরে – শকুনের চূড়ায়

রত্নগিরি। রাজগীরের সাতটা পাহাড়ের অন্যতম। টাঙ্গাগুলো এসে যেখানে নামায়, সেখানটা সারাদিনই প্রায় জমজমাট থাকে। একদিকে রোপওয়ে চড়ে বিশ্ব শান্তি স্তুপ যাওয়ার ভিড় আর অন্যদিকে ঘোড়া কাটোরা লেকের টোটোর লাইন। তারই মধ্যে দোকানপাট, টাঙ্গা স্ট্যান্ড আর ঘোড়াদের জল খাওয়ার জায়গা। রোপওয়েটা এখানে বেশ মজার। কেবিন আর সিঙ্গল সিটার চেয়ার – দুটোই চলে পাশাপাশি। অ্যাক্রোফোবিয়া না থাকলে, দ্বিতীয়টাতেই আমার মনে হয় রোপওয়ে চড়ার আসল আনন্দ পাওয়া যায়।
রাজগীর রোপওয়ে। পাশাপাশি কেবিন এবং চেয়ার।
রাজগীর রোপওয়ে। পাশাপাশি কেবিন এবং চেয়ার।
রোপওয়ে থেকে নেমে শান্তি স্তুপ যাওয়ার রাস্তায় দেখলাম লাইন দিয়ে বাঁদর বসে বেশ কয়েকটা। আজকাল এদের বাদাম খাওয়ানোর ব্যবসা পাল্টেছে। পয়সা দিলে রীতিমতো পোজ দিয়ে এদের সঙ্গে সেলফি তোলা যায়। স্বাভাবিকভাবেই জায়গাটায় ভিড় ভালোই।
রাজগীর - বাঁদরের সঙ্গে সেলফি
রাজগীর – বাঁদরের সঙ্গে সেলফি
রাজগীর বিশ্ব শান্তি স্তুপ
রাজগীর বিশ্ব শান্তি স্তুপ
বিশ্ব শান্তি স্তুপ ভারতে আছে সাতটা। রাজগীর নিয়ে তার মধ্যে চারখানা দেখা হল আমার। শুনেছি এটাই নাকি সবথেকে পুরনো। দেখতে বাকিগুলোর মতই। এবং রোদে তেতে থাকা সিঁড়ি বেয়ে খালি পায়ে ওঠা একই রকমের চাপের। তিরিং বিরিং করতে করতে একপাক ঘুরে এসে নিচে নামার পথ ধরলাম। না, এবার আর রোপওয়ে নয়। নিচে নামবো হেঁটেই। কারণ, এখানের ভিড়ের প্রধান কারণ রোপওয়ে আর বিশ্ব শান্তি স্তুপ হলেও, রত্নগিরির মূল আকর্ষণটি অবস্থিত পায়ে চলা পথের প্রায় মাঝামাঝি জায়গায়।
রাজগীর - রত্নগিরি থেকে হেঁটে নামার রাস্তা
রাজগীর – রত্নগিরি থেকে হেঁটে নামার রাস্তা
বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদের জন্য রাজগীর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। প্রাচীন বৌদ্ধ পুঁথি অনুযায়ী বুদ্ধের অন্যতম প্রিয় জায়গা ছিল এই পাহাড়ের একটি চূড়া। স্থানীয় ভাষায় গৃধ্রকূট বা ইংরেজিতে ভালচারস পিক। হেঁটে ওঠানামার যেই রাস্তা, তার প্রায় মাঝমাঝি থেকে আরেকটা রাস্তা চলে গেছে পাহাড়ের অন্য দিকে। সেটা ধরে মিনিট দশেকের চড়াই ভাঙলেই এই গৃধ্রকূট।
হেঁটে নামার রাস্তার মাঝামাঝি থেকে গৃধ্রকূট
হেঁটে নামার রাস্তার মাঝামাঝি থেকে গৃধ্রকূট
নামার রাস্তা থেকে ভালচারস পিকের দিকে ঘুরতেই, লোকজনের ভিড় কমে গেল এক নিমেষে । কিছুটা এগিয়ে একটু উঠে একটা গুহা। আরেকটু এগিয়ে আরও একটা। প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন টেরাকোটার ফলক পাওয়া গেছে এই গুহাগুলি এবং তার আশপাশ থেকে। সেগুলি সবই নালন্দার মিউজিয়ামে রাখা আছে। গুহার ভিতর এখন একটা জায়গা কাপড়ে ঢেকে সামনে ছোট বুদ্ধমূর্তি রাখা আছে। ভিয়েতনামের দুই ভদ্রমহিলাকে সেখানে পুজো করতে দেখলাম।
প্রথম গুহা
প্রথম গুহা
দ্বিতীয় গুহা
দ্বিতীয় গুহা

গুহা ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে শেষ ক’টা সিঁড়ি ভাঙলেই গৃধ্রকূট। ফাঁকা একটা চাতাল মত। প্রাচীন জিনিস বলতে এখানে যা রয়ে গেছে, তা হল দুটি ইটের ঘরের ভগ্নাবশেষ। বলা হয় এই ঘরগুলোর মধ্যেই বুদ্ধ উপদেশ দিতেন। যেই সিঁড়ি বেয়ে এখানে উঠতে হয়, তার পাশেই একটা পুরনো পাথরের সিঁড়িও আছে দেখলাম।

শেষ ক'টা সিঁড়ি
শেষ ক’টা সিঁড়ি
গৃধ্রকূট
গৃধ্রকূট
গৃধ্রকূটে পুরনো ঘরের ভগ্নাবশেষ
গৃধ্রকূটে পুরনো ঘরের ভগ্নাবশেষ
গৃধ্রকূট
গৃধ্রকূট
পুরনো পাথরের সিঁড়ি
পুরনো পাথরের সিঁড়ি
চারপাশের পাহাড় আর জঙ্গল
চারপাশের পাহাড় আর জঙ্গল
ধর্ম বা ইতিহাস নিয়ে উৎসাহ না থাকলেও ভালচারস পিকে, আমার মনে হয়, পারলে সবারই আসা উচিৎ। লোকজন এখানে খুব বেশি কেউ আসে না, যা দেখলাম। চারদিকে শুধু পাহাড় আর ঘন সবুজ গাছপালা। এ’রকম একটা পরিবেশে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ কখনই ছাড়া উচিৎ না।
গৃধ্রকূটের ফলক
গৃধ্রকূটের ফলক