পেরিগ্যাল রহস্য – ১

“না মশাই, এখানে কিছুতে হাত দেওয়া আমার কেন, আমার চোদ্দপুরুষেরও অসাধ্য।”, হতাশ মুখে বেরিয়ে এসে বললেন লালমোহনবাবু।

 

আমরা এসেছি ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের উল্টোদিকে রয়েল এক্সচেঞ্জে। সকাল সকাল ফেলুদা যখন বলল আজকে একটা দারুন চমক অপেক্ষা করছে, তখন প্রথমে ভেবেছিলাম আমরা বোধহয় শার্লক হোমস মিউজিয়ামে যাচ্ছি। তাই উল্টোদিকের টিউবে ওঠাতে, সত্যি বলতে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।

 

রয়েল এক্সচেঞ্জটা অবশ্য দারুণ। ফেলুদা বলল ষোড়শ শতাব্দীতে চালু হলেও এখনকার বাড়িটা উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বানানো। বাইরে চমৎকার কাজ আর ভিতরটা ঝাঁ চকচকে সব দোকানে ভর্তি। গয়না, ঘড়ি, পারফিউম। মাঝখানের চাতালে খোলা রেস্তোরাঁ।

 

“অনেকদিনের শখ, বুঝলেন তো, একটা রোলেক্স কেনবার। একবার খোঁজ করে আসবো নাকি মশাই?”

 

“রো…”

 

ফেলুদার কথা শেষ হবার আগেই দেখি লালমোহনবাবু সামনের দোকানটায় ঢুকে পড়েছেন। ওয়াচফাইন্ডার অ্যান্ড কোম্পানি। তবে যতটাই উৎসাহ ভরে ঢুকেছিলেন, মিনিট দুয়েকের মধ্যে ততটাই মনমরা হয়ে বেরিয়ে এলেন ভদ্রলোক।

 

ওঁকে মনমরা দেখে ফেলুদা বলল, “হাত দেওয়াও সম্ভব নয় বলছেন?”

 

“আবার কি! দামগুলো দেখেছেন! লোন নিয়েও সম্ভব কেনা?”

 

“কেনার কথা তো বলিনি লালমোহনবাবু।”

 

“মানে?”, এবার আমিও ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

 

“১৭৪০ নাগাদ এই রয়েল এক্সচেঞ্জেই দোকান খোলেন এক ঘড়ি নির্মাতা। পরে ওঁর ছেলে, নাতিরা ব্যবসার হাল ধরেন। সেই সময়ের অন্যতম সেরা ঘড়ি নির্মাতা ছিলেন ওঁরা।”, এই অবধি বলে আমাদের দিকে তাকায় ফেলুদা। প্রায় একইসঙ্গে আমার আর জটায়ুর মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে একটা নাম।

 

“ফ্রানসিস পেরিগ্যাল!”

 

“সাব্বাস! তাহলেই বলুন লালমোহনবাবু, এখানের ঘড়িতে কি আপনার হাত পড়েনি?”

 

ভদ্রলোকের মুখে এতক্ষনে ওঁর ট্রেডমার্ক হাসিটা ফিরে এল। “হেঁ হেঁ। আমি যা ধরেছি, তার কাছে তো এই সুইস রোলেক্স বাচ্চা!”

 

“বয়সের দিক থেকে বাচ্চা তো বটেই। তবে কিনা সুইস বাচ্চা নয়। রোলেক্সের শুরু কিন্তু এই ইংল্যান্ডেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আরো অনেক কোম্পানির মতন এরাও সুইটজারল্যান্ডে চলে যায়। প্রধানত ট্যাক্স বাঁচাতে।”

 

“একদিনে এতো ধাক্কা দেবেন না মশাই। ছোটবেলা থেকে সুইস চকোলেট আর ঘড়ির সুনাম শুনে আসছি। এতো দেখছি ধার করা!”

 

“চকোলেট নিয়ে ধাক্কাটা তাহলে না হয় পরেই দেবো।”, রয়েল এক্সচেঞ্জ থেকে বেড়িয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল ফেলুদা, “কিন্তু এখন যেটা না বললেই নয়, সেটা হল…”

 

আমার আর লালমোহনবাবুর উদ্গ্রীব মুখ উপেক্ষা করে সিগারেটে আরাম করে একটা লম্বা টান মেরে ফেলুদা বলল, “কলকাতার ঘড়িটা যে পেরিগ্যাল রিপিটার তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু রয়েল এক্সচেঞ্জের ফ্রানসিস পেরিগ্যালই কি সেটা বানিয়েছিলেন?”

 

“বলেন কি! এখানেও নকল?”

 

[ক্রমশ]

 

অলংকরণ: সৈকত সুরাই

2 thoughts on “পেরিগ্যাল রহস্য – ১

  1. ভালো লাগলো প্রথম পর্ব পড়ে। চমৎকার ভাবনা। ট্রাভালগ -এর নতুন দিশা। শুভেচ্ছা সুমিত।

    1. ধন্যবাদ অমিতাভদা।

Comments are closed.