কমিকস, কেক এবং বাঁটুল দি গ্রেট
ছোটবেলায় বড়দিনের কেক সাধারণত বাড়িতেই বানানো হত। তবে বাবা কিনেও আনতো মাঝে মধ্যে। সেই রকমই একবার শুনলাম এক বিশেষ ধরণের কেক আনা হয়েছে। নাম নাকি ডান্ডি। শুনেই তো আমি বুঝে নিয়েছি আদতে কী আনা হয়েছে। গোদা বাংলায় যাকে বলে সেন্ট পারসেন্ট শিওর। ছবিতে বহু বার দেখেছি। লাল সাদা স্ট্রাইপ দেওয়া বাকানো লাঠির মত ডান্ডি। কিন্তু, জিনিসটা যে আদতে কেক, সেটাই যা শুধু জানা ছিল না।
বলাই বাহুল্য, কেকের বাক্স খোলার পর কনফিডেন্স যাকে বলে একদম ফুসসস হয়ে গেছিল। খেতে কেমন লেগেছিল তা অবশ্য এখন আর মনে নেই। তবে, ডান্ডি নামের আসল কারণটা যে সেই প্রি-ইন্টারনেট যুগে সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারিনি, তা বিলক্ষণ মনে আছে। কে জানতো বহু বছর পরে সেই ডান্ডিতে পা রাখবো একেবারেই অন্য কিছুর খোঁজে!
মধ্য-পূর্ব স্কটল্যান্ডের একটা শহর ডান্ডি। ব্রিটেনের কমিক্স জগতের অন্যতম নাম ডি সি থমসনের প্রধান কার্যালয় এখানেই। সেই ডি সি থমসন, যাদের ম্যাগাজিনে ছাপা হয় ডেসপারেট ড্যান বা কর্কি দ্য ক্যাটের কমিক্স। যথাক্রমে আমাদের বাটুল দ্য গ্রেট এবং বাহাদুর বেড়ালের অনুপ্রেরণা। প্রধানত সেই কারণেই আমার স্কটল্যান্ড ভ্রমণের তালিকায় ছিল ডান্ডির নাম। তবে, দুই পেটুকে একসঙ্গে কোথাও গেলে সেখানকার খাবার দাবার না চেখে কি আর থাকা যায়! আর ডান্ডি বললে প্রথমেই যা মাথায় আসে, তা হল ডান্ডি কেক।
আর পাঁচটা বিখ্যাত খাবারের মতই ডান্ডি কেকের ইতিহাস নিয়েও বেশ কিছু গল্প চালু আছে। তার মধ্যে একটা এই যে স্কটল্যান্ডের রানী প্রথম মেরী নাকি ফ্রুট কেকে চিনির সিরায় চোবানো চেরি দেওয়া পছন্দ করতো না। তার জন্য চেরির বদলে আমন্ড দেওয়া কেক বানানো হত। সেই শুরু ডান্ডি কেকের। বানিজ্যিকভাবে অবশ্য এই কেক বানানো শুরু হয় আরও পরে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে জেমস কিলারের দোকানে। সেটা নিয়েও একটা মজার গল্প আছে।
জেমসের ছিল মুদির দোকান। একবার ঝড়ে আটকা পড়া এক জাহাজ থেকে সস্তায় প্রচুর কমলালেবু কেনে জেমস। কিন্তু পরে দেখা যায় সেগুলো সবই তেতো। বিক্রি করা সম্ভব নয় কোনমতেই। অতঃপর জেমসের মা জ্যানেট সেগুলো দিয়ে মার্মালেড বানিয়ে ফেলে। আর মার্মালেড বানানোর পর পড়ে থাকা কমলালেবুর খোসা ব্যবহার করা হয় কেক বানাতে। সেই মার্মালেড এবং কেক দিনে দিনে জনপ্রিয়তা লাভ করে হয় আজকের ডান্ডি মার্মালেড এবং কেক।
মার্মালেড জিনিষটা অবশ্য তার আগে থেকেই ছিল। জ্যানেট আলাদা যেটা করে সেটা হল কমলালেবুর খোসার টুকরো যোগ করা। ডান্ডি কেকের ব্যাপারটাও একই। ওই ধরণের কেক আগেও বিভিন্ন জায়গায় বানানো হত। এরা খালি কমলালেবুর খোসা যোগ করে। ২০১৩ সালে ডান্ডি কেকের GI ট্যাগের জন্য আবেদন করা হয়। সেখানে দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী ডান্ডি কেক বলতে গেলে থাকতেই হবে কমলালেবুর খোসা, সুলতানা এবং আমন্ড। চেরি থাকা চলবে না। দেওয়া যেতে পারে শেরি। সেই আবেদন অবশ্য খারিজ হয়ে যায়।
ডান্ডি কেক এমনিতে আমাদের দেশের মতই ব্রিটেনেও সব সুপারমার্কেটেই পাওয়া যায়। তার মধ্যে চেরি দেওয়া থাকতেও দেখেছি। এমনকি ডান্ডির বহু বেকারিও চেরি ব্যবহার করে। যাই হোক, ডান্ডি এসে কি আর স্থানীয় বেকারির বানানো কেক না চেখে ফেরা যায়? জ্যানেট এবং জেমস কিলারের দোকান ১৯৯২ সালেই বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা তাই ডান্ডি কেকের জন্য গিয়েছিলাম শতাব্দীপ্রাচীন ফিশার অ্যান্ড ডোনাল্ডসনে। GI ট্যাগ পাক বা না পাক, ওদের ডান্ডি কেক কিন্তু বেশ ভালো। অসম্ভব ময়েস্ট, অসম্ভব বাটারি এবং অসম্ভব ভালো খেতে। প্রথমদিন একটা ছোট্ট কেক কিনেছিলাম। পরেরদিন ফিরে আসার আগে একটা জাম্বো কেক কিনে নিয়ে আসি।