শিকমপুরি কাবাব

শিকমপুরি। লক্ষ্ণৌর যেমন তুন্ডে, হায়দ্রাবাদের তেমনই শিকমপুরি। শিকম মানে পেট, আর পুর মানে ভর্তি। অর্থাৎ যে কাবাবের পেট ভর্তি। আদতে আমাদের পরিচিত শামী কাবাবের ভিতরে দই আর পেঁয়াজের পুর ভরলে যেটা দাঁড়ায়, তাকেই বলে শিকমপুর বা শিকমপুরি কাবাব।
খোয়াবের শিকমপুরি কাবাব। বছর এগারো আগে তোলা।
খোয়াবের শিকমপুরি কাবাব। বছর এগারো আগে তোলা।
হায়দ্রাবাদের শান এই কাবাব প্রথম খাওয়ার সৌভাগ্য অবশ্য হয়েছিল এই কলকাতায় বসেই। বাড়ির কাছেই, বাগবাজারে, খোয়াব বলে একটি রেস্তোরাঁয়। হায়দ্রাবাদি খাবারের রেস্তোরাঁ খুলেছে শুনে লাফাতে লাফাতে গিয়েছিলাম। কাবাব থেকে বিরিয়ানি, প্রথমবারেই মন জয় করে নিয়েছিল। নরম, সুস্বাদু মাংস, আর ভিতরে মোটা করে দইয়ের পুর। সঙ্গে অল্প পেঁয়াজ কুচি মেশানো। নিঃসন্দেহে আমার খাওয়া অন্যতম সেরা কাবাব। ভাবতে খারাপ লাগে সেই খোয়াব শেষের দিকে হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানিতে আলু দিতে বাধ্য হয়েছিল। তারপর ত সে রেস্তোরাঁ বন্ধই হয়ে গেল।
খোয়াবের শিকমপুরির দইয়ের পুর।
খোয়াবের শিকমপুরির দইয়ের পুর।
গেল মাসে যখন হায়দ্রাবাদ যাওয়া ঠিক হল, খাবারের লিস্টিতে প্রথমেই যেই নামটা লিখেছিলাম, সেটা হল শিকমপুরি কাবাব। কোথায় কোথায় খাওয়া যায়, ইন্টারনেটে সেটা ঘাঁটতে যেতেই প্রথম ধাক্কাটা খেলাম। সার্চে উপরের দিকেই ছিল বিখ্যাত শেফ রনভীর ব্রারের একটা ভিডিও। ভদ্রলোক দেখলাম শাদাবে গিয়ে শিকমপুরি কাবাব এবং বিরিয়ানি অর্ডার করলেন। বেশ গুছিয়ে শিকমপুরির মানে বোঝালেন। কাবাব এল। ভাঙতে দেখি, একি! ভিতরে ত পুরই নেই কিছু। এ ত আমাদের অতি পরিচিত শামী কাবাব! ল্যাপটপের একদিকে আমি হতাশ হয়ে বসে রইলাম, অন্যদিকে রনভীরবাবু তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে গেলেন সেই কাবাব।
শাদাবের পুরবিহীন শিকমপুরি কাবাব। রনভীর ব্রারের ভিডিয়ো থেকে।
শাদাবের পুরবিহীন শিকমপুরি কাবাব। রনভীর ব্রারের ভিডিয়ো থেকে।
এই ঘটনার পর ভাবলাম, থাক, ইন্টারনেটে খুঁজে লাভ নেই। একেবারে হায়দ্রাবাদে পৌঁছে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ঠিকঠাক দোকানের নাম নিয়ে নেব। কিন্তু আসলে যে ব্যাপারটা অত সহজ হবে না, সেটা তখনও বুঝিনি।
পুরনো হায়দ্রাবাদের বেশ কিছু দোকানে খোঁজ করে যা বুঝলাম শিকমপুরি কাবাব ব্যাপারটা খোদ নিজামের শহরেই বেশ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। যেই দোকানে গিয়েই খোঁজ করি না কেন, প্রথমে বেশ মাথা-টাথা নেড়ে বলে, হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই পাওয়া যাবে। কিন্তু পুরের কথা উঠলেই দেখি সবই আদতে শামী কাবাব।
এর মধ্যে একদিন শাদাবে খেতে গেছিলাম। ভাবলাম একবার জিজ্ঞেস করেই দেখি। আমাদের খাবার যিনি দিচ্ছিলেন, তিনি বললেন ওরা নাকি পুর দেওয়া শিকমপুরিই বিক্রি করেন। তবে পাওয়া যায় খালি শুক্রবার। এগারোটা থেকে। হায়দ্রাবাদে যে কাজে গিয়েছিলাম, সেটা শুক্রবার থাকায়, এ যাত্রা অবশ্য আর সেটা চেখে দেখা হয়ে ওঠেনি।
হায়দ্রাবাদের ফানুজের শিকমপুরি কাবাব।
হায়দ্রাবাদের ফানুজের শিকমপুরি কাবাব।
শেষমেষ, ফেরার আগে আগে লকড়ি কা পুলের কাছে ফানুজ বলে একটা রেস্তোরাঁয় পাওয়া গেল রোজের মেনুতে পুরসমেত শিকমপুরি কাবাব। তবে, ওই যাকে বলে, না আঁচালে বিশ্বাস নেই। টেবিলে খাবার আসতেই তাই সবার আগে পেট কেটে ফেলা হল একটা কাবাবের। নাঃ, পুর আছে। পেঁয়াজের আধিক্য বেশি হলেও কাবাবটা খেতে জম্পেশ ছিল। মোলায়েম মাংস, আর মধ্যে হালকা দই, মশলা মাখানো কচকচে পেঁয়াজ।
ফানুজের শিকমপুরির পুর।
ফানুজের শিকমপুরির পুর।
পরের বার হায়দ্রাবাদ গেলে চেষ্টা করবো শাদাবের শুক্রবার স্পেশাল শিকমপুরি খাওয়ার। আর শুনলাম রামজানের সময় গেলে নাকি অনেক দোকানেই খাঁটি শিকমপুরি পাওয়া যায়। ততদিন অবধি আমার খাওয়া সেরা শিকমপুরি কাবাব নিঃসন্দেহে খাস কলকাতার খোয়াবেরটাই।