বাঙালির বিলেত ভ্রমণ – ৩ (ইপ্সুইচের নদী)
ইপসুইচকে দুইভাগ করে বয়ে যাওয়া নদীটাকে প্রথম দেখি রেল স্টেশন যাওয়ার সময়। নদী বলছি বটে, তবে চওড়ায় কমবেশি আমাদের কেষ্টপুর খালের মতনই হবে। একটু এগিয়ে ডকের কাছে অবশ্য তার প্রস্থ অনেকটাই বেশি। আর সেখান থেকে চওড়া হতে হতে সোজা গিয়ে মিশেছে নর্থ সিতে, যেখানে নদীর একদিকে ইংল্যান্ডের সবথেকে বড় কন্টেনার পোর্ট ফেলিক্সটো, আর অন্যদিকে হ্যারিচ, যেখান থেকে ছাড়ে হল্যান্ডের ফেরী।
ইপসুইচ ডকের একটু আগে শুরু হয়ে নদীর ধারের এই রাস্তাটা চলে গেছে সেই স্টোমার্কেট অবধি। মোট দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার। নাম, গিপিং ভ্যালি রিভার পাথ। নদীর নাম গিপিং। শহরের ভিতর সে রাস্তা বেশ আরামদায়ক। তবে তারপরে শুরু হয় ঝোপঝাড় ভেঙে হাঁটা। মাঝে পড়ে ছবির মত সুন্দর ছোট ছোট সব গ্রাম। চওড়ায় নদী তখন আরো সরু।
গিপিং নদীর ধার ধরে, মাঝের কিছুটা অংশ বাদ দিয়ে, প্রায় পুরোটাই হেঁটেছিলাম। তখনই নদীর সম্পর্কে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানতে পারি কলকাতার সঙ্গে লতায় পাতায় একটা সম্পর্ক আছে এর। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে গিপিংকে পরিবহনের উপযোগী বানানোর জন্য কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক নকশা বানান উইলিয়াম জেশপ। এঁরই দুই ছেলে হেনরি ও জর্জ ১৮২০ সালে কলকাতার ব্রিন অ্যান্ড কোম্পানি অধিগ্রহণ করে বানান জেশপ অ্যান্ড কোম্পানি। ব্রেথওয়েট এবং বার্নের সঙ্গে যারা পরবর্তীকালে বানাবে আমাদের হাওড়া ব্রিজ।
ভারতের সঙ্গে অবশ্য আরেকটাও সম্পর্ক আছে এই নদীর। ইপসুইচে ঢোকার পর এর নাম পাল্টে হয় অরওয়েল। আর নিজের প্রথম বই প্রকাশ করার সময় সেই নামটাই ব্যবহার করেন এরিক ব্লেয়ার। হয়ে যান জর্জ অরওয়েল। ১২০ বছর আগে ১৯০৩ সালের জুন মাসের ২৫ তারিখ বিহারের মতিহারিতে জন্মেছিলেন উনি।